রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:৩২ অপরাহ্ন

‘দেশ ছেড়ে পালানোর আগে আদানিকে গ্রেফতার করা উচিত’

‘দেশ ছেড়ে পালানোর আগে আদানিকে গ্রেফতার করা উচিত’

স্বদেশ ডেস্ক:

মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটিমাত্র প্রতিবেদন। আর তাতেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে।
সপ্তাহখানেক আগে যে আদানি গোষ্ঠীর সাথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সম্পর্ক একটি মধুর দিকে এগোচ্ছিল। দরপত্রের মাধ্যমে তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দরের বরাত পেয়েছিল আদানি গোষ্ঠী। ডিসেম্বরে তাদের কর্মকর্তারা এসে ‘সাইট ভিজিট’ও করে গিয়েছেন। কিন্তু এরই মধ্যে ছবিটা বদলে গেল।

মাত্র এক সপ্তাহ আগের ছবিতে দেখা যায়- নবান্নে জোড় হাতে মাথা নিচু করে আছেন গৌতম আদানি। বিশ্বের অন্যতম ধনী শিল্পপতি। আর সামনে হাসিমুখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

এখন সেই গৌতম আদানির বিরুদ্ধেই সরব তৃণমূল কংগ্রেস। আদানি ইস্যুতে মুলতুবি প্রস্তাব পর্যন্ত আনলেন তৃণমূল সাংসদ গৌতম রায়। সৌজন্যে, মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি রিপোর্ট। তাতে দাবি করা হয়, আদানি গোষ্ঠী শেয়ারের ভ্যালুয়েশন অনায্যভাবে বাড়িয়েছে। সংস্থার ঘাড়ে অস্বাভাবিক অঙ্কের দেনা আছে বলেও দাবি তোলা হয়। গত ২৪ জানুয়ারির সেই রিপোর্টেই ধস নেমেছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে। মাত্র দিন পাঁচেকেই আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার বাজার থেকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে যায়। যদিও আদানি গোষ্ঠী পাল্টা জানিয়েছে, হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে তাতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেচে দেওয়ার হিড়িক কমেনি।

এমন পরিস্থিতিতে সময় থাকতেই আদানি গোষ্ঠীর তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতারা। তবে পশ্চিমবঙ্গের সমীকরণটা কেমন যেন অন্যরকম। কেমন?

ছবি হাতে শুভেন্দু

নবান্নে মমতা-আদানি সাক্ষাত্কার। বৃহস্পতিবার সেই ছবির প্রিন্ট আউট নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভার বিরোধী দলনেতার দাবি, ‘আমরা সবাই জানি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার (আদানি) সাথে একটা গোপন আঁতাত করেছিলেন। আমি তাজপুর বন্দর নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। ২৫,০০০ কোটি রুপি বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। ১০ লাখ চাকরি দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতির এবার কী হবে?’

তখন

বিগত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাথে আদানি গোষ্ঠীর সম্পর্ক একটি শুভ দিকেই এগোচ্ছিল বলা চলে। মাস কয়েক আগে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল গৌতম আদানিকে।

দরপত্রের মাধ্যমে রাজ্যের হেভিওয়েট তাজপুর বন্দর প্রকল্পও জিতে নেয় আদানি গোষ্ঠী। রাজ্য সরকারের বিজয়া সম্মিলনীতেই আসেন গৌতমপুত্র করণ আদানি। তাঁর হাতে তাজপুর বন্দরের নথি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

এখন

আদানির শেয়ার টালমাটাল। হু-হু করে টাকা হারাচ্ছে আদানি গোষ্ঠীর সাত সংস্থা। আর এমন পরিস্থিতিতে পূর্ব বর্ধমানের এক সভা থেকে নাম না করেই তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কালকে তো প্রায় সরকার পড়ে যাচ্ছিল। কেন পড়ে যাচ্ছিল? শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল। এবার কাউকে কাউকে অনুরোধ করে…আমরা জানি তারা কারা। নামগুলো বলে আমি আর তাঁদের দুর্বিসহ করতে চাই না।’

সরব হন তৃণমূল এমপি সুখেন্দুশেখর রায়ও। তিনি বলেন, ‘ইডি, সিবিআইয়ের মতো যে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো বিরোধীদের পিছনে ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের ছায়া পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীকে স্পর্শ করতে পারল না। কেন পারল না?’

এরপরেই অবশ্য আসল ‘বোমা’টা ফাটান সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে তদন্ত হওয়া উচিত্। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধাররা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন তাই তাদের গ্রেফতার করা উচিত। পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা উচিত। তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত এয়ারপোর্টে লুক আউট নোটিশ জারি করা উচিত। এমনকি ইন্টারপোলকেও সতর্ক করা দরকার।’

কিন্তু আদানির সাথে রাজ্যের সুসম্পর্কের কী হবে?

এই প্রশ্নের উত্তরে সুখেন্দুশেখর বলেন, ‘কারোর সাথে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন সরকার শিল্প সম্মেলন করে। আমাদেরও শিল্প সম্মেলন হয়েছে। আমাদের শিল্প সম্মেলনে আম্বানি ও আদানিও এসেছেন। পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পপতিরাও এসেছেন। যারা আমাদের রাজ্যে বিনিয়োগ করতে চান তাদের সবসময় স্বাগত। কিন্তু তাই বলে সাত খুন মাফ হয়ে যাবে তা হয় না।’

আদানির জন্য রাজ্যের কোনো প্রকল্পও আটকে যাবে না। আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877